‘মহারাজ’ ও ‘ভাগ্যরাজকে’ কিনলেই এসি-মোটরসাইকেল ফ্রি!
মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলায় কোরবানির বাজারে বিশালাকার ষাঁড় ‘মহারাজ’ ও ‘ভাগ্যরাজকে’ নিয়ে দুই গ্রামীণ কৃষক নেমেছেন পুরস্কারের প্রতিযোগিতায়। তাদের ষাঁড় কিনলেই ক্রেতা পুরস্কার হিসেবে পাবেন এসি ও মোটরসাইকেল। উপজেলার বহুলবাড়িয়া ও খালিয়ায় প্রাকৃতিক উপায়ে লালন-পালন করা ‘মহারাজ’ ও ‘ভাগ্যরাজের’ ওজন ৩০ ও ৪০ মণ, ষাঁড় দুটির দাম হাঁকা হচ্ছে ২০ ও ২৫ লাখ টাকা।
সরেজমিনে বহুলবাড়িয়া গ্রামে জীবন বিশ্বাস ও মাধবীলতা বিশ্বাসের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন সেখানে বিশালাকার ‘মহারাজকে’ দেখতে ভিড় করছেন অনেক মানুষ। মাঝেমধ্যে ষাঁড়টি উঠানে বের করতে হলে কমপক্ষে ৫ জন লোকের সহায়তার প্রয়োজন হয়। ৬ ফিট উচ্চতা ও ১৪ ফিট লম্বা কালো রঙের বিশালদেহী ‘মহারাজের’ চলাফেরায় রাজকীয় ভঙ্গি। গোয়াল ঘর থেকে ‘মহারাজকে’ বের করতে রীতিমত ঘাম ঝরাতে হয় মালিকপক্ষকে। এবারের কোরবানির বাজারে ইতিমধ্যে ৩০ মণে ওজনের মহারাজের নাম ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে।
খামারি জীবন বিশ্বাস বলেন, ‘সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার ঘাস, খৈল, ভুষি, খড় খাইয়ে বড় করা হয়েছে ‘মহারাজকে’। কোনো ক্রেতা ৩০ মণের এই মহারাজকে যদি ২০ লাখ টাকায় ক্রয় করেন, তবে তাকে একটি দুই টনের এসি উপহার দেয়া হবে।
তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে মাগুরাসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ষাঁড়টি দেখতে ক্রেতা আসছেন তার বাড়িতে, তবে আশানুরূপ মূল্য না পাওয়ায় ষাঁড়টি এখনও বিক্রি করেননি।
অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী খালিয়া গ্রামে কৃষক মোফাজ্জল হোসেন তার গোয়ালে দেশি পদ্ধতিতে লালন করেছেন ৪০ মণ ওজনের ‘ভাগ্যরাজকে’। জন্মের পর থেকে চার গাভীর দুধ খেয়ে বড় হওয়ায় ওই ষাঁড়টির নাম রাখা হয়েছে ‘ভাগ্যরাজ’।
খামারি মোফাজ্জল হোসেন বলেন, দেশীয় পদ্ধতিতে বড় করে তোলা ১৬০০ কেজি ওজনের ভাগ্যরাজকে ২৫ লাখ টাকায় যে কিনবে তাকে ১৫০ সিসি একটি নতুন পালসার মোটরসাইকেল পুরস্কার দেয়া হবে।
খামারি ও স্থানীয়দের দাবি, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবারে বিশালাকার মহারাজ ও ভাগ্যরাজ কোরবানির বাজারে ভালো মূল্যে বিক্রি হবে। তাদের সবার মুখে শোনা গেছে ষাঁড় দুটির সুখ্যাতি। গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে এ ধরনের পশু পালন বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা তাদের।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মিহির কান্তি বিশ্বাস জানান, কোরবানিকে সামনে রেখে দেশীয় পদ্ধতিতে স্বল্প খরচে দানাদার খাবারের বিপরীতে প্রাকৃতিক খাবারের মাধ্যমে এ ধরনের গরু মোটাতাজাকরণ কৃষকের অর্থনীতি আরও মজবুত করবে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের এ ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য মতে, মাগুরায় এ বছর কোরবানি উপলক্ষে খামারে ২ হাজার ৩৯২টি ষাঁড়, ৬৬৫টি বলদ ও ৮ হাজার ৪৭৭টি গাভী মোটাতাজা করা হয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী জেলায় এ বছর মহিষ, ছাগল ও ভেড়াসহ ৯২ হাজার ৮৯১টি কোরবানিযোগ্য পশু হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। জেলার চাহিদা হিসেবে ৬৯ হাজার ৬৭৮টি বিক্রির পরও ২৩ হাজার ২২৩টি কোরবানিযোগ্য পশু উদ্বৃত্ত থাকবে; যা দেশের অন্যত্র বিক্রি করা যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।