সিলেট শহরের কিছু দর্শনীয় স্থান।
অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা ভূমি সিলেট। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও সিলেটে রয়েছে প্রসিদ্ধ নানান ইতিহাস। এখানে বসবাস কারি বিভিন্ন আদিবাসীদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতি । হযরত শাহজালাল আর শাহপরাণের স্মৃতিধন্য সুরমাতীরের শহর সিলেট। এই ছোট্ট শহরে আছে দর্শনীয় অনেক জায়গা ।
হযরত শাহজালালের মাজার
সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হযরত শাহজালালের (র.) মাজার। সুলতান শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহের শাসন কালে ১৩০৩ সালে হযরত শাহজালালের হাতে এ অঞ্চল পরাজিত হয়। সেই সময়ে তুরস্কের কুনিয়া শহর থেকে তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ৩১৩ জন শিষ্য সহ এই দেশে আসেন। ১৩৪০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করলে তাকে এখানেই সমাহিত করা হয়। মাজার কমপ্লেক্সে ও ভেতরে শত শত জালালি কবুতর,পুকুর ভর্তি গজারমাছ ছাড়াও হযরত শাহজালালের ব্যবহৃত তলোয়ার রক্ষিত আছে। প্রতি বছর হযরত শাহজালাল মাজার জিয়ারতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের ঢল নামে।
লাক্কাতুরা চা-বাগান
সিলেট শহর থেকে বিমানবন্দর যেতে পথেই লাক্কাতুরা চা-বাগান। ন্যাশনাল টি কোম্পানির মালিকানাধীন এই চা-বাগান খুবই সুন্দর। সরকারি এই চা বাগানটি প্রায় ৩২০০ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। অসংখ্যা চা গাছ ও উঁচুনিচু পাহাড়ে ঘেরা লাক্কাতুরা চা বাগান দেশের বৃহত্তম চা বাগানগুলোর মধ্যে অন্যতম। ওসমানী এয়ারপোর্ট রোড থেকে ডানদিকে এগোলে লাক্কাতুরা চা বাগানের মূল প্রবেশদ্বার নজরে পড়বে। বাম দিকে রয়েছে চা ফ্যাক্টরি ও রাবার বাগান। চা বাগানে আরও আছে কমলা, সুপারি, ট্যাং ফল, আগর, আতরসহ অনেক ধরনের গাছগাছালি। সিলেট থেকে স্থানীয় পরিবহণে সহজেই লাক্কাতুরা চা বাগানে যাওয়া যায়।
মালনিছড়া চা-বাগান
বিমানবন্দর সড়কেই আরেক চা-বাগান মালনিছড়া । এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো চা-বাগান। ১৮৫৪ সালে ইংরেজ হার্ডসনের হাত ধরে যাত্রা শুরু এই বাগানের। টিলাঘেরা এই চা-বাগানের ভেতরটা ছবির মতো সাজানো। প্রচুর বানর আছে এই বাগানে । এই চা বাগানটি বেসরকারি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হলেও সুন্দর সময় কাটানোর জন্য পর্যটকদের কাছে পছন্দেও স্থান হিসাবে সুপরিচিত পেয়েছে। সিলেট শহরের যে কোনো প্রান্ত থেকে রিকশা, অটোরিকশা বা সিএনজি চালিত অটোরিকশা ভাড়া করে মালনিছড়া চা বাগানে যেতে পারবেন। আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে অটোতে চড়ে ১০ মিনিট এবং রিকশায় ২৫ মিনিটের মতো সময় লাগবে।
মাজার মসজিদ
হযরত শাহজালালের মাজার প্রাঙ্গণে প্রাচীন মসজিদ। বিভি ন্ন সময়ে সংস্কারের ফলে মসজিদটি বর্তমানে আধুনিক রূপনিলেও এটি সর্ব প্র থম নির্মাণ হয়ে ছিল ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দে।
হযরত শাহপরাণের মাজার
হযরত শাহপরাণ ছিলেন হযরত শাহজালালের ভাগনে । তিনিও ছিলেন একজন সাধক পুরুষ। শহরের পূর্ব দিকটায় দক্ষিণ গাছের খাদিমপাড়ায় এই মাজার অবস্থিত। বিশাল বটগাছের ছায়াতলে এই মাজার। প্রতি দিন হাজার হাজার ভক্তে রপদচারণায় মুখরিত থাকে পুরো মাজার এলাকা ।
সুরমা নদী
সিলেট শহরের দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বাংলাদেশের অন্যতম নদী সুরমা । শহরের চাঁদনী ঘাট থেকে সুরমা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
আলী আমজদের ঘড়িঘর
ক্বিন ব্রিজের উত্তর পাড়ে সুরমা নদীর তীরের চাঁদনী ঘাটে প্রাচীন ঘড়িঘর। এটি নির্মাণ করেছিলেন সিলেটের কুলাউড়ার পৃত্থিমপাশার জমিদার আলী আলী আমজদ খান। দিল্লির চাঁদনী চকে শাহজাদী জাহানারার নির্মিত ঘড়িঘর দেখে মুগ্ধ হয়ে তিনি এটি তৈরি করেছিলেন বলে কথিত আছে।
ক্বিন ব্রিজ
সুরমা সেতু নামেও এটি বেশ পরিচিত। লোহার তৈরি এই সেতুটি ১৯৩৬ সালে নির্মাণ করা হয়। তৎকালীন ইংরেজ গভর্নর মাইকেল ক্বিনের নামে এর নামকরণ। ১১৫০ ফুট লম্বা এবং ১৮ ফুট প্রস্থ এই সেতুটি দেখতে ধনুকের মতো বাঁকানো। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী ব্রিজটির একাংশ উড়িয়ে দেয়। পরে ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের অর্থায়নে বিধ্বস্ত অং শটি পুনর্নির্মাণ করা হয়।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
সিলেট শহরের পাশে কুমারগাঁও এলাকায় অবস্থিত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও ঘুরতে যেতে পারেন। ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলামেলা ক্যাম্পাস ভালো লাগবে সবার।
মনিপুরী জাদুঘর
শহরের সুবিদবাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এই জাদুঘর। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে বসবাসরত আদিবাসী সম্প্রদায় মনিপুরীদের শত বছরের কৃষ্টি আর ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে এই জাদুঘরের মাধ্যমে। দেখা মিলবে কয়েকশ বছরের পুরনো ঘণ্টা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত নানান দ্রব্যসামগ্রী, যুদ্ধে ব্যবহৃত সরঞ্জাম,মনিপুরীদের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প সামগ্রীসহ আরও অনেক কিছু।
এমসি কলেজ
সিলেট শহরে অবস্থিত প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মুরারীচাঁদ কলেজ বা সিলেট এমসি কলেজ। ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশাল জায়গা জুড়ে এই কলেজের ক্যাম্পাসে এখনও আছে অনেক পুরনো স্থাপনা।
ওসমানী স্মৃতি জাদুঘর
সিলেট শহরের কোর্ট পয়েন্টের কাছে নাইওরপুলে আছে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর বাসভবন ‘নুর মঞ্জিল’। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের পরিচালনায় এই ঘরে বসেছে ওসমানী স্মৃতি জাদু ঘর। খোলা থাকে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। আর অক্টোবর থেকে মার্চ সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। শুক্রবার খোলা থাকে বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার এবং অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনে জাদু ঘর বন্ধ থাকে।
শুকতারা প্রকৃতি নিবাস
সিলেটের খাদিমনগরের উদ্দীনের টিলায় সবুজে ঘেরা প্রায় ৭ একর জায়গা জুড়ে সবুজ এক স্বর্গ শুকতারা প্রকৃতি নিবাস। সিলেট ভ্রমণে থাকার জন্য এই জায়গাটি উৎকৃষ্ট।
কীভাবে যাবেন
সড়ক, রেল ও আকাশ পথে ঢাকা থেকে সরাসরি সিলেট যেতে পারেন। চট্টগ্রাম থেকেও সিলেটে যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাসস্টেশন থেকে সিলেটের বাসগুলো ছাড়ে। এই পথে গ্রিন লাইন পরিবহণ, সৌদিয়া, এস আলম পরিবহণ, শ্যামলি পরিবহণ ও এনা পরিবহণের এসি বাস চলাচল করে। এছাড়া শ্যামলী