৩ মাস বন্ধের পর উন্মুক্ত হলো সুন্দরবন
নানা প্রজাতির মাছ এবং বন্যপ্রাণীর প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবন প্রবেশে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয় বন মন্ত্রণালয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর রোববার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে উন্মুক্ত করা হয়েছে সুন্দরবন। প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় সকাল থেকেই জেলেরা বনে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। অন্যদিকে, বনের সৌন্দর্য হাতছানি দিয়ে ডাকছে দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদেরও। পর্যটককে বরণ করে নিতে নতুন সাজে সাজিয়েছে নৌযান, প্রস্তুত বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রসহ অন্যান্য পর্যটক স্পট। রাজনৈতিক অস্থিরতা আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পেছনের লোকসান কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে জানায় পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
প্রকৃতির নিজ হাতে গড়া সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য মুগ্ধ করে যে কাউকে। মোংলা বন্দরের কোল ঘেঁষা সুন্দরবনের পরিবেশ-প্রতিবেশ; যে দিকে চোখ যায় শুধু বন আর বন। বনের অপরূপ সৌন্দর্য, বন্যপ্রাণীদের ডাক আর সুন্দরবনের রঙ-বেরঙের পাখিদের কলকাকলিতে মুগ্ধ করে পর্যটকদের। এ বনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কুমির আর চিত্রা হরিণসহ নানা স্থল ও জলজ প্রাণীর আশ্রয়স্থল।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মাছ ও বন্যপ্রাণীর প্রজনন মৌসুমে বংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে তিন মাসের জন্য বনের নদী-খালে মাছ আহরণ ও পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। বন্ধের পরে ১ সেপ্টেম্বর রোববার থেকে আবারও বনের নদী-খালে মাছ ধরার জন্য জাল-নৌকা আর সরঞ্জাম নিয়ে প্রবেশ করছে জেলেরা। বনের স্পটগুলোতে প্রবেশ করতে শুরু করছে পর্যটকরাও।
সুন্দরবনের করমজল, হারবাড়িয়া, আন্দারমানিক, দুবলা, কটকা, কচিখালী ও নীলকমলসহ সমুদ্র তীরবর্তী ও বনাঞ্চলের সবকটি পর্যটকস্পটে দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে এক ধরনের মিলন মেলায় পরিণত হবে। সে জন্যই নতুন সাজে সাজিয়ে রাখা হয়েছে পর্যটক স্পটগুলো। আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে সতর্ক অবস্থায় প্রস্তুত রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও বনবিভাগ।
দি-সাউদার্ন ট্যুরের পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ থাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে পর্যটক বহনকারী ট্যুর ব্যবসায়ীদের। গত তিন মাস কর্মচারীদের বেতন ও নৌযান সচল রাখাসহ অন্যান্য দিকে প্রচুর খরচ হয়েছে। তাই এবারে আশা করা যাচ্ছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকেল দুই থেকে তিনগুণ বাড়বে দর্শনার্থী সংখ্যা, আর পূর্বের লোকসানের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে ট্যুর ব্যবসায়ীরা।’
বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটক স্পট সুন্দরবন কর-মজলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ‘গেল ঘূর্ণিঝড় রেমালে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সুন্দরবনে। গত তিন মাস বনে মাছ ধরা ও পর্যটক প্রবেশ বন্ধ থাকায় কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে সুন্দরবন। রোববার থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে। সুন্দরবনের করমজলসহ অন্যান্য পর্যটকস্পটে দেশ-বিদেশি দর্শনার্থীদের ভ্রমণের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বন বিভাগ। দর্শনার্থীদের আগমন এবং নিরাপত্তা জন্য পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি বনরক্ষীরাও প্রস্তুত রয়েছে। আশা করছি দেশি-বিদেশি পর্যটকরা নিরাপদে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।’
গত ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশ ও বনের নদী-খালে মাছ ধরা সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বন বিভাগ।