কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে - পর্যটন উপদেষ্টা
রোহিঙ্গা সংকট কক্সবাজারের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণ বলে মন্তব্য করে ভূমি, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনবিষয়ক উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আসিয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে। এই বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে এরই মধ্যে আলোচনা-পর্যালোচনা চলমান রয়েছে।’
শনিবার (২৩ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার আর্টস অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘কক্সবাজার সংলাপ’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘কক্সবাজারের টেকসই উন্নয়নে স্থানীয় সক্ষমতাকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা খুবই প্রশংসিত উদ্যোগ। এই অনুষ্ঠান আয়োজনের ফলে কক্সবাজার পর্যটন, মৎস্য শিল্প, ভৌগোলিক অবস্থান, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধান, পলিসি গ্রহণ ইত্যাদি অনেক বিষয় আমাদের সামনে উঠে এসেছে। কক্সবাজার নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই সামনে আসে পর্যটনের বিষয়টি। কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যটন শিল্পকে কীভাবে রক্ষা করা যায়, কীভাবে বিকশিত করা যায়, এই বিষয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এ অঙ্গনে পরিকল্পিত কাজ করে বিস্তর পরিবর্তন আনা সম্ভব।’
কক্সবাজার জেলার টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কক্সবাজার সংলাপ: যুক্তির তীরে সম্ভাবনার আলো’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান।
কক্সবাজার কমিউনিটি অ্যালায়েন্স-ঢাকা (সিসিএডি) আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সোনালী ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী ও ইতিহাসবিদ আলতাফ পারভেজ। সঞ্চালনায় ছিলেন কক্সবাজার সংলাপের আহ্বায়ক মোহিব্বুল মোক্তাদীর তানিম।
এই সংলাপকে সময়োপযোগী আখ্যা দিয়ে অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘কক্সবাজার বাংলাদেশের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল হলেও এর গুরুত্ব বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। পৃথিবীজুড়ে পর্যটন শিল্প এবং সমুদ্র অর্থনীতির গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছে। সমুদ্র অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের যত কর্মযজ্ঞ তা কক্সবাজারকে কেন্দ্র করেই সম্ভব। ভৌগোলিক দিক থেকেও কক্সবাজারের গুরুত্ব অনেক।
বঙ্গোপসাগর এবং সীমান্তবর্তী এই জেলাটি পরিবেশ, প্রতিবেশ ও ভূপ্রকৃতিগত কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এছাড়া ঐতিহাসিক কারণেও কক্সবাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। ক্যাপ্টেন কক্সের ইতিহাস এবং আরব বণিকদের দেড় হাজার বছরের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে কক্সবাজারের গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে যায়।’
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ‘কক্সবাজারের টেকসই উন্নয়নে স্থানীয় সক্ষমতা গড়ে তোলাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত’ বিষয়ে প্রতীকী বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত কক্সবাজারের ছাত্র-ছাত্রীরা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে অংশ নেন।
এই বিতর্কে কক্সবাজারের টেকসই উন্নয়ন, ভূরাজনীতি, নিরাপত্তা, দুর্যোগ মোকাবেলা ও সার্বিক বিষয়গুলো উঠে আসে। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে কক্সবাজারের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে পরিকল্পনাবিদদের মাস্টারপ্ল্যান পর্যালোচনা ও মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে কক্সবাজারের উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ রচনার অঙ্গীকার নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হয়। দিনব্যাপী এই সংলাপে অংশ নেন ঢাকায় কক্সবাজারের পেশাজীবী ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীরা। এই সংলাপের মাধ্যমে কক্সবাজারের টেকসই উন্নয়নের সম্ভাবনার নতুন দিক উন্মোচন করা হবে বলে আয়োজকরা আশাবাদী।