লালবাগ শাহী মসজিদ
ব্যস্ত ঘিঞ্চি পুরনো ঢাকার চিরায়িত পথে বর্নিল জীবন আর ঢাকার পরিচয় বহনকারী কেল্লার মাঝামাঝি
দাড়িয়ে আরেকটি ইতিহাস-লালবাগ শাহী মসজিদ। আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘের দলের সাথে যেন প্রতিদিন প্রতি প্রহর খেলা কওে লালবাগ শাহী মসজিদের সুউচ্চ মিনার। আজ থেকে প্রায় ৫২ বছর পূর্বে তৎকালীন পাকিস্থান আমলে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্যে সংযোজিত হয় মিনারটি।
লালবাগ শাহী মসজিদের ইতিহাস-এর পুরনো বা আরেকটি নামের সাথে জুড়ে দেয়া, আর তা হলো র্ফরুখ সিয়ার মসজিদ। বর্তমানের এ লালবাগ শাহী মসজিদটিই পূর্বের ফররুখ সিয়ার মসজিদ বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন।
মূঘল বাদশাহ্ আজিমউশ-শান এর পূত্র নবাব র্ফরুখসিয়ার বাবার নির্দেশিত দ্বায়িত্ব পালন করতে পূর্ব বাংলায় আসার পর পরই ১৭০৩ থেকে ১৭০৪ সালের মধ্যে নির্মান করেন এ মসজিদটি। কথিত আছে মূঘলদের তত্বাবধানে নির্মিত বাংলার সালতানাতে এটিই সর্ব বৃহৎ মসজিদ যাতে ১৫০ জনমুসল্লি তিনটি কাতারে জামাতে নামাজ আদায় করতে পারতো।
মূল মসজিদটি ৪৭.৮৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪.৩৩ মিটার প্রস্থেও মূল মসজিদ ১০.০৭ মিটার পুরত্বের দেয়ালে মোড়ানো। ভারত বর্ষে যতো মূঘল স্থাপনা আছে তার মধ্যে লালবাগ শাহী মসজিদ সম্ভবত একমাত্র স্থাপনা
যাতে কাঠের ভিম ব্যাবহার করে সমতল ছাদ বিশিষ্ট করে নির্মানকরা হয়।
ঢাকার প্রভাব শালী নবাব খাজা আব্দুল গনী ১৮৭০ সালে লালবাগ শাহী মসজিদেও বড় ধরনের পুনঃন নির্মানের কাজ সম্পাদন করেন। নির্মান কাজে ব্যাবহার করেন ইট ও পাথর যা বর্তমানেও
অক্ষুন্ন অবস্থায় রয়েছে।
বর্তমান মসজিদটি ঐতিহ্য ইসলাম এবং আধুনীক স্থাপত্যের একটি বিরল নান্দনীক উদাহরন। পুরো মসজিদ জুড়ে যে দিকেই দৃষ্টি ফেরানো হোকনা কেন মরিশ মাল্টিফোয়েল পিলারের সু-সজ্জিত
অবস্থান যে কোনমুসল্লি বা ভ্রমনকারীকে অন্যরকম ভালো লাগার উপলব্ধি দিবে।
মসজিদের ভিতরে ঢুকতেই চোখে পরেবিশাল একটি অজু খানা, গোছানো ছোট্ট পুকুর সদৃশ এ অজু খানায় যেন শাহী মসজিদের প্রান। হাজারো মুসলমানের পবিত্র হওয়ার চেষ্টা ও শান্তি অনুভবে
মুখর। আর মসজিদের তাবৎ সৌন্দর্য যেন এ অজু খানায় আচড়ে পড়ে খেলা করছে। সুন্দরের প্রতি আগ্রহী যে কেউ বিমহিত হবে এ অজু খানা দেখে।
মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে সুরা আর-রহমান খচিঁত নকশা, কুরআন প্রেমিক মানুষরা হয়তো মনের অজান্তেই গুন গুন করবে - ফাবিআয়্যি অ’ালা ই রব্বিকোমা- তুকাজ্বিবান-
তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কোন অনুগ্রহকে অস্বিকার করবে?! মসজিদটির ভিতরটি যেমন বড় ও সুন্দর তেমনি এর নকশায় স্থাপত্যের মুন্সিয়ানা ও স্পষ্ট। শাহী মসজিদের মেহরাবের অলংকরনের জন্য ”মুকারনাসফিল্ডণিশ ”পদ্ধতি ব্যাবহার করা হয়েছে। নানা কারু কাজ; জ্যামিতিক আকার আকৃতির সমন্বয় এর মেহরাবকে আরো বেশি দৃষ্টি নন্দন করেছে।
মেঝেতে বসানো পুরনো টাইলস এর সাথে নতুন টাইলস বিন্যস্ত করে অক্ষুন্য রাখা হয়েছে এর সৌন্দর্য।
লালবাগ কেল্লার দক্ষিন দেয়াল ঘেষেঁ অবস্থিত এ মসজিদটিতে দ্বীন চর্চা ও শিক্ষার আলো ছড়িয়েছেন মাওলানা সমসুল হক ফরিদপুরী এবং হাফেজ্জি হজুররের মতো ইসলামিক মনিষিরা। যে আলো
আজো অব্যাহত।
ঢাকাকে যদি মসজিদের শহর বলা যায় তাহলে হয়তো লালবাগ শাহী মসজিদকে সেই মসজিদ
গুলোর অন্যতম প্রধান উৎস বলা যাবে।
- সালেহ অাহমেদ