টানা ছুটিতে সাগরপারে উচ্ছ্বাস, হাওরে জ্যোৎস্না স্নান
সাপ্তাহিক বন্ধসহ টানা তিন দিনের ছুটিতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এখন পর্যটকে ভরপুর। শহরের হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ও রিসোর্টগুলো জমজমাট। সাগরপারের লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত এলাকায় উৎসবের আমেজ। সপ্তাহব্যাপী পর্যটন উৎসবকে কেন্দ্র করে আগেই বর্ণিল সাজে সাজানো হয় কক্সবাজারকে। পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভালে দর্শনার্থীরা আনন্দময় সময় কাটাচ্ছেন।
সাগরপারে দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাস, দিনভর আনন্দ। পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তিন দিনে অন্তত চার থেকে পাঁচ লাখ পর্যটক কক্সবাজার আসবেন। ট্রিপ জোন ট্যুর অ্যান্ড ট্র্যাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিকু পাল জানান, মূলত তিন দিনের ছুটিতেই পর্যটক সমাগম থাকবে।মেলার আয়োজন থাকায় বাড়তি আনন্দ পাচ্ছেন পর্যটকরা।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে সৈকতে গিয়ে দেখা গেছে, সৈকতের তিন কিলোমিটার এলাকায় সাজ সাজ রব। লাবণী পয়েন্ট সৈকতে নামার ফটকে মেলা ও বিচ কার্নিভাল উপলক্ষে তৈরি করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। মঞ্চের সামনে সড়কের দুই পাশে সারি সারি স্টল। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মেলায় ঘোরাঘুরি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া পর্যটকরা কক্সবাজার শহর থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে যাচ্ছে দরিয়া নগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক, টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিন ছুটছেন। কেউ কেউ ছুটছেন মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, রামুর বৌদ্ধ পল্লী, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক ও কোলাহলমুক্ত নৈসর্গিক বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে।
রাজধানী ঢাকার বাসাবো থেকে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, ‘দারুণ একটা সময়ে আমরা কক্সবাজার বেড়াতে এসেছি। সাগরপারে পর্যটন মেলার অনুষ্ঠানগুলো আমরা উপভোগ করছি।’
পর্যটন মেলা উপলক্ষে সৈকতে স্থাপন করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জন্মদিন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বালু ভাস্কর্য। বালু ভাস্কর্যটি পর্যটকদের বাড়তি আকর্ষণ করছে। চট্টগ্রাম থেকে আসা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ কলিম বলেন, ‘একদম সময়োপযোগী বালু ভাস্কর্য। এটি নিয়ে সবাই সেলফি তুলছে।’
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে মৌসুমের শুরুতেই পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভালের আয়োজন করা হয়েছে। এ জন্য পর্যটন সেবা সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গতকাল ছিল পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভালের তৃতীয় দিন। এদিন সন্ধ্যায় ‘পর্যটন আবাসন খাতে বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক সেমিনার হয়। জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য মো. জাফর আলম। বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্যথিন অং, বসুন্ধরা গ্রুপের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. আবুহেনা ও কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুল ইসলাম।
জ্যোত্স্না স্নানের টানে হাওরে
টানা তিন দিনের ছুটিতে জল-জ্যোত্স্নায় স্নান করতে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। পর্যটকদের নিয়ে এখন দেড় শ বিলাসবহুল হাউসবোট, দুই শ দেশি নৌকা আর ৫০টি স্পিডবোট টাঙ্গুয়ার হাওর ও যাদুকাটা নদীতে অবস্থান করছে। পর্যটকদের অনেকেই চাহিদামতো নৌযান না পেয়ে স্পিডবোট করে হাওর দেখছেন। পর্যটক ও তাঁদের বহনকারী যানবাহনের ভিড় সামলাতে শনির হাওরপারের নিভৃত তাহিরপুর উপজেলা সদরে প্রশাসন ও পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বেগ পেতে হচ্ছে।
সাধারণত মে মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত হাওরে পর্যটকদের চাপ থাকে। তবে বন্ধের দিন হলে তা বেড়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার থেকে তিন দিন টানা বন্ধের কারণে এবং এ সময় ভরা পূর্ণিমা থাকায় হাওরে পর্যটকদের আগমন প্রায় তিন গুণ বেড়েছে।
টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসা পর্যটকরা টাঙ্গুয়ার হাওর ছাড়াও শনি হাওর, মাটিয়ান হাওর, নীলাদ্রী লেক, ট্যাকেরঘাটছড়া, লাকমাছড়া, লালঘাটছড়া, চানপুর ঝরনা, বারেকটিলা, যাদুকাটা নদী ও দেশের বৃহত্তম জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান দেখতে যান।
সূর্যাস্তে টাঙ্গুয়ার হাওর আরেকটি মোহনীয় রূপ ধারণ করে। হাওরে দ্বীপের মতো ভেসে থাকা গ্রাম, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, মৃদুমন্দ বাতাসে ছোট ছোট ঢেউয়ে পর্যটকরা মুগ্ধ হন। আর এ কারণেই টাঙ্গুয়ার হাওরে ভ্রমণকারীরা সুযোগ পেলেই হাওরটি দেখতে বারবার ফিরে আসেন।
টাঙ্গুয়ার হাওর দেখতে ঢাকা থেকে আসছেন নতুন দম্পতি সজল ও শিল্পী। সজল ব্যবসায়ী আর শিল্পী সরকারি চাকরি করেন। সজল বলেন, ‘বিশাল হাওরে রাতের নির্জনতায় হাউসবোটের ছাদে শুয়ে জ্যোৎস্না স্নান করতেই হাওরে এসেছি।’