ইসলাম শান্তি ও মঙ্গলের ধর্ম। অশান্তি কিংবা বিশৃঙ্খল জীবন কাম্য নয়। মানুষ চায় না অসুস্থ জীবন। মহান আল্লাহও চান মানুষ তাঁর বান্দার জীবন বিশৃঙ্খলাপূর্ণ হোক। আল্লাহর নৈকট্য এবং জান্নাত পেতে প্রয়োজন ঐশী বিধান তথা ইসলামি রীতিনীতি। যার কল্যাণ দেড় হাজার বছর আগে থেকে প্রমাণিত হয়ে এসেছে।
কোরআন এবং রাসুল (সা.)-এর হাদিস এমন এক আশ্রয়, যেখানে শুরু থেকে এ পর্যন্ত সাম্প্রতিক সব সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে লক্ষ্য করলেই তা বোঝা সম্ভব। আর কোরআন ও হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, আরবি বারো মাসের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত মাস রমজান; যে মাসের উপকারিতা ও কল্যাণ পূর্ব থেকে এ পর্যন্ত পরীক্ষিত। আরও উল্লেখ রয়েছে এ মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরা যা যা শিখতে পারবো।
রমজানে সিয়াম ও আনুষাঙ্গিক ইবাদতের মাধ্যমে যা শিখতে পারবো তা হলো—
১. তাকওয়া অর্জন: এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম (রমজানের) ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর যেন তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারো। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
উক্ত আয়াতের তাক্বওয়া মানে– আল্লাহকে ভয় করার মতো ভয় করা। যাবতীয় পাপাচার থেকে দূরে থেকে পরহেজ (সংযম, মিতাচার, অসৎকাজ থেকে সাবধানতা) করাকে অব্যহত রাখা।
২. ধৈর্য ধারণ: হাদিসে এসেছে, হজরত আবু ওসমান আন-নাহদি থেকে বর্ণিত। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ধৈর্যের মাস হলো রমজানের রোজা রাখা এবং প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা, যা সারা বছরের রোজা বলে গণ্য। (সুনানে নাসাঈ, হাদিস : ২৪০৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৭৫৭৭)
এই হাদিসের অর্থ হচ্ছে—অনাহার-অর্ধাহারে জীবন কাটানো মানুষের কষ্ট বুঝে গরিব-দুঃখীদের পাশে থাকা।
৩. পাপমুক্ত জীবন: ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে এবং শেষ রাতে ইস্তেগফারের মাধ্যমে পেছনের গোনাহ থেকে ক্ষমা চাওয়া, আর সামনের এগারো মাস পাপমুক্ত থাকার অনুশীলন করতে শেখা। হাদিসে এসেছে, হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যহ ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৪৩)
৪. নেক কাজ বেশি বেশি করা: ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় ভালো কেনাকাটার বিশেষ মৌসুম থাকে। যখন ব্যবসায় খুব জমজমাট ও লাভজনক হয়। তখন বছরের অন্য সময়ের চেয়ে বেশি আয় হয়। আখেরাত ব্যবসায়ীদের মৌসুম হলো—রমজান মাস। কেননা এ মাসে প্রতিটি আমলের সাওয়াব অনেক গুণ বেশি হয়। হাদিসে এসেছে, রমজান মাসে যে ব্যক্তি একটি নফল আদায় করলো সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করলো। আর যে এ মাসে একটি ফরজ আদায় করলো সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করলো। (কানযুল উম্মাল, হাদিস : ২৩৭১৪)
৫. দোয়া কবুল হওয়া: সুখ-দুঃখে যিনি পাশে থাকেন, তিনিই একমাত্র ভরসা। একজন মুমিন সবসময় আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল। এ নির্ভরশীলতা অব্যহত রাখতে মহান রব রমজান মাসের যে কোনও সময় বান্দার ডাকে সাড়া দিয়ে তা কবুল করেন। হাদিসের ভাষায়, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তিন ব্যক্তির দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না। (১) রোজাদারের দোয়া; ইফতার পর্যন্ত। (২) ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। (৩) মজলুমের দোয়া। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ১৫৮)
৬. একনিষ্ঠতা: রোজাই একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির (একনিষ্ঠতা বা ইখলাস) জন্য আমল করার শিক্ষা দেয়। কেননা সামনে হাজারও সুযোগ থাকা স্বত্ত্বেও দিনের বেলায় রেস্তোরাঁ কিংবা ভোজনশালায় গিয়ে খেয়ে বাইরে এসে রোজার অভিনয় করা যায়। কিন্তু তা না করে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষে বারো থেকে ষোলো ঘণ্টা না খেয়ে, না পান করে এবং স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকে। হাদিসে কুদসিতে এসব মুমিনের পুরস্কারের কথা উল্লেখ করে আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, রোজা ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য (আমল অনুযায়ী ফলাফল পাবে)। কিন্তু রোজা আমার (সন্তুষ্টির) জন্য। তাই আমি এর প্রতিদান (মাধ্যম ছাড়া সরাসরি আমি) দেবো।' (সহিহ বোখারি, হাদিস : ১৯০৪)